.
বিছানায় বসে ধ্যান করছি। জ্বর
বাবাজিকে কোনোমতই আসতে দেওয়া
যাবেনা।তানাহলে যত প্ল্যান ছিল সব
মাটি হয়ে যাবে।ড্রয়ার থেকে আস্তে করে
থার্মোমিটার টা বের করে জিহবার নিচে
রাখলাম।ফুল ১ মিনিট নাকি ধরে রাখতে
হবে।মগের মুল্লুক।এইভাবে এত্ত বড় একটা
শক্ত জিনিস মুখে ধরে রাখা যায় নাকি?
চকলেট হলে তবুও একটা কথা ছিল চুষে চুষে
খাওয়া যেত।ছোটবেলায় তো একবার জ্বরের
ঘোরে থার্মোমিটার চাবাতে শুরু করে
দিচ্ছিলাম আম্মু ছিল বলে সেই যাত্রা
রক্ষা পেয়েছিলাম ঠিকি কিন্তু জ্বর থেকে
সেরে উঠার পর উপরতলায় থাকা পেত্নীটার
পঁচানির যন্ত্রনায় মাঝে মাঝেই মনে হত
সেদিন থার্মোমিটার টা চিবিয়ে পারদ
গুলো গিলে ফেললেই বুঝি ভাল হত। যাক গে
সেইসব কথা।থার্মোমিটার টা জিহবার
নিচ থেকে বের করলাম। ১০১.০৫ তাপমাত্রা
টাকে মোটেও মামুলি মনে হলো না।সব ওই
পেত্নীটার জন্য।সেদিন ওকে কলেজ থেকে
আনতেই তো যত বিপত্তি।কোন কুলক্ষনে যে
ওর কলেজ এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম আর
বৃষ্টির মধ্যে অসহায় পেত্নীটাকে ভিজতে
দেখে শেষ সম্বল ছাতাটা ওর মাথায় ধরে
বাড়ি এনেছিলাম কে জানে।ভেবেছিলাম
বাসায় আসার পর ভদ্রতা করে একটা ধন্যবাদ
জানাবে কিন্তু সে আশা গুড়েবালি।বরং
হাসতে হাসতে বিষম খেয়ে উনি বললেন,
বৃষ্টিতে ভিজে নাকি আমাকে
কাকতাড়ুয়ার মত লাগছে।আমার অবস্থা
তখন- "ললনা সব বুঝেও করো কেনো ছলনা?
আমার মন কখনো কি তুমি বুঝবেনা এই
টাইপস।"তবে ললনার মা অর্থাত আমার
খালাম্মা যথেষ্ট জামাই আদর করলেন।
মাথা মুছিয়ে দিলেন।দুপুরের ভাত খাইয়ে
দিলেন।বাসায় আসলে আম্মুও গরম পানি
করে দিলেন গোসলের জন্য।আসলে মা
জাতটাই অনন্য।তাদের সাথে কারো
কোনো তুলনাই হয়না।তবে এত আদর যত্ন
পেয়েও কোনো কাজ হলো না।জ্বর বাবাজি
শেষ পর্যন্ত কাবু করলই।
.
.
.
জ্বরের ঘোরে কাঁথা মুড়ি দিয়ে কোঁ কোঁ
করছি এই সময় আম্মু আর আমার রিমা
পেত্নীটা ঘরে ঢুকল।এদের আসলে আক্কেল
জ্ঞান বলতে কিছু নেই।জোয়ান একটা
ছেলের ঘরে কেউ নক না করে ঢোকে? ভাগ্য
ভালো গায়ের উপরে কাঁথা আছে তানাহলে
শোয়ার সময় যে আমার লুঙ্গি মহারাজের
কোনো ঠিক ঠিকানা থাকে না এই
ব্যাপারটা এদের কিভাবে বুঝাই?
---কিরে আবির এই অসময়ে এইভাবে শুয়ে
আছিস কেনো? কি হয়েছে? গায়ে একমণ
ওজনের কাঁথা জড়িয়েছিস কেনো? এক্ষুনি
ওইটা ছেড়ে উঠে পড়।
কিছু বলতে যাব এই সময় পেত্নীটা হঠাৎ
কথা বলে উঠল- "আন্টি আপনার ছাগল ছেলে
নিশ্চয়ই ঘুমের মধ্যে বিছানা ভিজিয়েছে
তাই এখন তার কুকর্ম ঢাকতেই কাঁথা উড়ে
শুয়ে আছে।"
.
.
মেয়ে বলে কি? ইচ্ছা করছে ১ চড় দিয়ে ওর
৩২ টা দাঁত ভেঙ্গে দেই (যদি ৩২ টা দাঁত
উঠে থাকে আর কি)কিন্তু এই নারীশাসনের
যুগে নারী নির্যাতনকারী হিসেবে
ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকতে
চাইনা তাই ডায়নীটার দিকে একটা কঠিন
চাহনী দিয়ে আম্মুর দিকে অসহায় চোখে
তাকালাম।ভেবেছিলাম আম্মু তার
একমাত্র ছেলের অপমানের কিছুটা হলেও
বিহিত করবেন কিন্তু না আমার মা জননীও
আঁচলে মুখ চাপা দিয়ে হাসতে হাসতে
বললেন- "কীরে আবির সত্যি সত্যি বাথরুম
করে ফেলেছিস নাকি? আর যদি করে
থাকিস তাহলে সেইটার উপরেই শুয়ে আছিস
কেনো? ছিহ ছিহ।"
আম্মুর মুখে এত বড় বিব্রতকর কথা শুনে মনে
হলো "হে ধরণী তুমি দ্বিধা হও আমি
সেইখানে আমার মাথা ঢুকিয়ে রাখব।"
এইবার আর চুপ করে থাকলে আম্মু আর
পেত্নী টার কথায় সমর্থন জানানো হবে
তাই দেরী না করে গলার সব শক্তি দিয়ে
চিৎকার করে জানিয়ে দিলাম আমি গুরুতর
অসুস্থ।জ্বরের তাপমাত্রার পরিমাণ ও ১
ডিগ্রী বাড়িয়ে বলতে ছাড়লাম না।এইবার
কাজ হলো ম্যাজিকের মত।আম্মু আর রিমা
দুজনি ছুটোছুটি শুরু করে দিল।একজন
থার্মোমিটার আনতে আর আরেকজন
জলপট্টির ব্যবস্থা করতে।যাক এতক্ষনে একটু
আদর যত্ন পাওয়া যাবে।
আম্মু এসে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগল
কেমন অনুভূত হচ্ছে? বমি বমি লাগছে নাকি।
এতক্ষন অপমান করার প্রতিশোধ হিসেবে
এইবার ভাব টা বাড়ায় একটু গম্ভীর হয়ে
গেলাম।আম্মুর চোখে সন্তানের কষ্ট হচ্ছে
এই ভেবে বেদনা আর আশ্চর্য হলেও দেখলাম
রিমার চোখেও আমার জন্য শংকা।
পেত্নীটার কি সত্যি আমার জন্য চিন্তা
হচ্ছে নাকি অপরাধবোধ?নাহ ব্যাপারটা
দেখতেই হচ্ছে।আর এইজন্য আম্মুকে সরানো
প্রয়োজন।অনেকক্ষন ধরে কি যেন পোড়ার
গন্ধ পাচ্ছি।তরকারী পুড়ছে সম্ভবত।আম্মুকে
বলতেই তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরের দিকে
চলে গেলেন।ঘরে আমি আর আমার
পেত্নীটা একা।রিমা এক মনে আমার
মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে।চোখ থেকে ১
ফোঁটা জল ও পড়ল মনে হলো।ধূর জ্বর এর
ঘোরে উল্টা পাল্টা দেখছি হয়ত।তবে
পেত্নীটার মন খারাপ বুঝা যাচ্ছে।করবনা
করবনা ভেবে জিজ্ঞেস করেই বসলাম।
---কীরে পেত্নী মন খারাপ কেন তোর?
---আজ আমার জন্যই তোর এমন অবস্থা।
সেদিন কেনো ভিজতে গেলি? আমি
ভিজতে ছিলাম ভিজতাম।
---ওরে বিখ্যাত ডায়নী, চূড়াল পেত্নী রিমা
রহমান আমার জন্য চিন্তা করছেন।সূর্য
পশ্চিম দিকে উঠল মনে হয়।আমি তো
ভাবলাম কোনো ছেলের প্রতি ক্রাশ
খাইছস কিন্তু সে তোকে রিজেক্ট করছে
দেখেই মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে
রাখছস।
---আরেহ হ্যা এরকম ও একটা ব্যাপার আছে।
(এই সময় আমার মনের ভালোবাসার
বেলুনের বাতাস ফুস করে বেড়িয়ে গেল)
আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম
-"ছেলেটা কে?"
---ছেলেটার নাম রাজীব।পাশের পাড়ায়
নতুন এসেছে।জানিস ছেলেটা দেখতে পুরো
রবাট প্যাটিনসনের মত।আমি তো দেখেই
ক্রাশড।
---ছেলে বিদেশী নাকি?
---মানে কি?রাজীব নামটা শুনে কি তোর
ওকে বিদেশী মনে হয়েছে?
---নাহ মানে তুই যে রবাট প্যাটিনসনের মত
সুন্দর বললি তো তোর ওই রাজীব যদি
বিদেশী না হয় তাহলে এত ফরসা হওয়ার
কথা না।
---ধূর সব সময় ফাইজলামী করবিনা।জানিস
ছেলেটা মনে হয় আমার প্রতি আগ্রহী।২
দিন ধরে কোচিং এর সামনে ঘুরঘুর করছিল।
কাল তাই নিজে ডেকে এনে কথা বললাম।
---এইটা তো দেখি কঠিন প্রেম।প্রেমিকাক
ে এক নজর দেখার জন্য কোচিং এ ঘন্টার পর
ঘন্টা অপেক্ষা করা।কত্ত ভালোবাসা
আহা।
---বাজে কথা বাদ দে।কাল Valantines Day
তে নাকি তাদের পাড়ায় কাপলরা মিলে
একটা অনুষ্ঠান করবে।সে আমাকে সেখানে
বেড়াতে নিয়ে যেতে চায়।আমি বলছি
রাতে ভেবে চিন্তে জানাব।
---নিয়ে যেতে চাইছে যাবি।আমাকে এত
কথা বলতেছিস কেনো?
---তুই তোর ওই পাড়ার ফ্রেন্ড দের থেকে
রাজীবের চরিত্র সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে
আমাকে জানা।
---যে ছেলের চয়েজ এত জঘন্য সেই ছেলের
ক্যারেক্টার আরো জঘন্য হওয়ার কথা।
---কিহ? কি বললি তুই?
---আরেহ না না কিছু না।তুই বিকেলের
দিকে এইখানে আসিস আমি খোঁজ নিয়ে
রাখব।
রিমা চলে গেল।আমার মাথায় রক্ত এখন
টগবগ করে ফুটছে।ইচ্ছা করছে রাজীব নামের
ছেলেটাকে পিটিয়ে চামড়া ছিলে লবন
লাগিয়ে দিতে।আমার পেত্নীর দিকে হাত
বাড়িয়েছে ব্যাটা কোন সাহসে?কিন্তু নাহ
নিজেকে বোঝালাম এখন মাথা গরম করলে
চলবেনা।ঠান্ডা মাথায় শয়তানী চাল
চালতে হবে।
.
.
বিকেলের দিকে রিমা আসল।আমি তখন খুব
মনোযোগ দিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছি।এই
কাজটা রিমা খুব অপছন্দ করে।এইজন্যই
করছি।পেত্নীটা যখন কপাল কুচকিয়ে বকা
দিতে শুরু করে তখন ওকে দারুন মিষ্টি
লাগে।আজকেও তার ব্যাতিক্রম হলো না।
নখ দাঁত দিয়ে কাটানো দেখতেই আমার
পেত্নীটা চিল্লাচিল্লি শুরু করল।
---কীরে দাঁত দিয়ে নখ কাটতেছিস কেনো?
এইজন্যই তো বারো মাসে ১৩ বার ডায়রীয়া
হয় তোর।
---ডায়রীয়া আমার হয় তোর তো হয়না।তুই
এমন ডায়নীদের মত চিল্লাস কেন?
---দেখ আমার সামনে নখ এইভাবে দাঁত
দিয়ে নখ কাটবিনা।তানাহলে দাঁত সহ নখ
ভেঙ্গে দিব বললাম।
নখ ভাঙ্গুক সমস্যা নাই।টিকটিকির লেজের
মত আবার গজাবে কিন্তু দাঁত ভাঙলে
সমস্যা আছে। এই বয়সে মাড়িতে আর
কোনো দুধের দাঁত নেই যে ভেঙ্গে গেলে
সেইটা তুলে ফেললে আবার উঠবে।অগত্য চুপ
করে গেলাম।এই জ্বর গায়ে দজ্জাল
পেত্নীটার সাথে কোমর বেঁধে ঝগড়া করার
আমার কোনো ইচ্ছে নেই।
পেত্নীটা এইবার কাজের কথায় চলে এলো।
---রাজীব সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছিলি?
---হ্যা নিয়েছিলাম তো।ছেলে ভালো না।
অনেক মেয়ের সাথেই তার ডার্লিং
ডার্লিং সম্পর্ক।মেয়েদের ন্যাকড়ার মত
ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া তার অন্যতম
প্রিয় শখ।জ্বর না থাকলে আমিই তোকে ওই
পাড়ায় অনুষ্ঠান টা দেখাতে নিয়ে
যেতাম।যদিও মানুষ আমার মত স্মার্ট একটা
ছেলের পাশে তোর মত ডায়নীকে দেখলে
ভীরমি খাবে তারপরেও বন্ধুর জন্য তো
এতটুকু করাই যায়।
(ভেবেছিলাম আমার এই কথা শোনার পর
রিমা প্রচন্ড রেগে মাথায় একটা গাট্টা
বসিয়ে দিবে কিন্তু তা হলোনা।পেত্নীটা
গম্ভীর হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল-
"রাজীবের ব্যাপারে কি তুই শিওর?"
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে হ্যা বললাম।
রিমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেই
মেয়েটা মিথ্যাটা ধরে ফেলতে পারে।
মেয়েটা মুখ কালো করে উঠে চলে গেল।
আমার জ্বরের কি অবস্থা এইটাও জিজ্ঞেস
করল না।
.
.
.
.
কালো বলে ছোটবেলা থেকেই ছেলেরা
রিমাকে খুব একটা পছন্দ করত না।আর যারা
পছন্দ করত তারা কেউ রিমাকে
ভালোবাসত না শুধু সময় কাটাতে চাইত।
খালাতো ভাই আর সব থেকে কাছের বন্ধু
হিসেবেই রিমাকে এইসব ছেলে থেকে সব
সময় আগলিয়ে রাখতে চাইতাম।কিন্তু
আগলে রাখতে রাখতে কখন যে নিজেই
পেত্নীটার প্রেমে পড়ে গিয়েছি তা টের
পাইনি।তাই শেষের দিকে যেইসব ছেলেই
রিমার উপর আগ্রহ দেখিয়েছে কোনো খোঁজ
খবর না নিয়েই ছেলে গুলোর নামে এক
গাদা মিথ্যা বলে দিয়েছি রিমার কাছে।
আর পেত্নীটাও সরল মনে তা বিশ্বাস
করেছে।তবে আজকের মত আর কোনোদিন
ওকে এত হতাশ আর গম্ভীর হতে দেখিনি।
আচ্ছা এই রাজীব ছেলেটাকে ভালোবেসে
ফেলেনি তো রিমা?আমি মিথ্যা বলে ওর
হৃদয়টা ভেঙ্গে ফেললাম না তো?
.
.
.
পেত্নীটাকে আজ সব সত্যি কথা বলে দিব।
কাল সারারাত অনেক ভেবেছি।রিমা হয়ত
আমাকে কখনোই তার আত্নীয় বা বন্ধুর
বাইরে কিছু ভাবেনি।আর তার পুরো
অধিকার আছে নিজের পছন্দের মানুষকে
ভালোবাসার, বিয়ে করার।আমি মিথ্যা
কথা বলে আর কতদিন ওর স্বপ্ন, কামনা,
বাসনাগুলোকে শেষ করব? আমার কোনো
অধিকার নেই ভালোবাসার মানুষটাকে
এভাবে কষ্ট দেওয়ার।তাই আমি আজ ওকে
সব বলব।এরপর যা হয় হবে।
.
.
---কীরে জ্বরের কি খবর তোর? হিন্দুদের হয়
১২ মাসে ১৩ পার্বণ আর তোর হয় ১২ মাসে
১৩ অসুখ।কোন পোড়াকপালী মেয়ে যে তোর
বউ হবে তার জন্য ১ বালতি আফসোস।
---আমি বিয়ে করলে তো তোর আমার বউ এর
জন্য আফসোস হবে? যাক গে সেইসব কথা।
আমি আজ তোকে একটা সত্যি কথা বলতে
চাই।
---তাই নাকি? তুই আবার সত্যি কথাও বলতে
পারিস? আমি তো ভাবছি তোর অভিধানে
সত্য বলে কোনো শব্দ নেই।
---মজা নিবি নাকি সত্যিটা শুনবি?
---আচ্ছা বল।কিসের সত্য?
---রাজীবের নামে তোকে কালকে যা বলছি
তা ছিল মিথ্যা।আমি কোনো খোঁজ খবর
করিনি।তুই এক কাজ কর ছেলেটা যেহেতু
তোকে ঘুরতে নিয়ে যেতে চায় তো ঘুরে
আয়।কোনো সমস্যা মনে হলে আমাকে
সাথে সাথে ফোন দিস।পল্টুর ফোন টা বন্ধ।
যখনি খুলবে আমি ওকে ফোন দিয়ে তোর
রাজীবের সম্পর্কে সব কিছু জেনে নিব।
---তুই গতকাল কেনো আমাকে রাজীবের
সম্পর্কে মিথ্যা বললি?
আমি রিমার এই প্রশ্নের উওর দিলাম না।
পাশ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লাম।রিমা আর
কোনো প্রশ্ন করল না।কিছুক্ষন অদ্ভুতভাবে
তাকিয়ে থেকে চলে গেল।মনে মনে ক্ষীন
আশা ছিল পেত্নীটা হয়ত আমার নীরবতার
কারনটা বুঝতে পারবে।আমার পাশে বসে
মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে কিন্তু আশার
প্রদীপের আলোর উজ্জলতা খুব ক্ষীণ
থাকায় তা দপ করে নিভে গেল।আমি কিছুই
করতে পারলাম না।
.
.
.
মোটর সাইকেলের ভট ভট শব্দ পেলাম।আর
আমার পেত্নী টার ও গলার আওয়াজ
পেলাম।এই বাসায় কোনো মোটর সাইকেল
নেই তাহলে হয়ত ওই রাজীব ছেলেটাই
নিতে এসেছে রিমাকে।উঠে গিয়ে
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের দুজনকে দেখার
কোনো ইচ্ছে হলো না।একটু পরে মোটর
সাইকেল টা চলে যাওয়ার শব্দ পেলাম।
প্রচন্ড খারাপ লাগছে।শরীর আর মাথাটা
ভার হয়ে আছে।খোলামেলা জায়গায় গিয়ে
সেই জায়গার বাতাসে শ্বাস নেওয়া
দরকার।অসুস্থ শরীর নিয়েই আম্মুর অগোচরে
ছাদে চলে এলাম।গোধূলী বেলায় আকাশ টা
অদ্ভুত রং ধারন করেছে।ইশ এখন যদি আমার
পেত্নীটাকে পেতাম।হাতটা ধরে নিজের
ভালোবাসার কথাটা বলে এক দৌড়
দিতাম।যাতে মাইর না খেতে হয়।কিন্তু
এইসব ভেবে আর কি হবে? আমার পেত্নীটা
এখন তার পছন্দের মানুষের সাথে আছে।
কত কি প্ল্যান করেছিলাম আজকের এই
ভালোবাসা দিবসের সন্ধ্যাটার জন্য।সব
আশায় জল পড়ে ভেসে গেল।
এইসব একমনে ভাবছি হঠাৎ কোথা থেকে
যেন খিলখিল হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।
বাবারে রাত বিরোতে কি সত্যিকারের
পেত্নীর খপ্পরে পড়লাম নাকি?তাড়াতাড়ি
ছাদ থেকে নামতে যাব দেখি ছাদের
চিলেকোঠার ঘরে আলো জ্বলছে।যাক
পেত্নীরা নিশ্চয় আলো জ্বালাবেনা।ওরা
অন্ধকারের জীব।একটু ঢুঁ মারতে এগিয়ে
গেলাম।কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম পুরো
চিলেকোঠার ঘরে মোমবাতি জ্বালানো।
আর মেঝেতে গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে I
love you লিখা।সহসা পিছন থেকে একটা নরম
হাতের ছোঁয়া অনুভব করলাম।
---রি রি রিমা তুই এখানে?
তুই ওই ছেলের সাথে যাসনি?
---কে ছেলে? কোন ছেলে? রাজিব নামের
কোনো ছেলের অস্তিত্ব ওই পাড়ায় থাকলে
তো যাব।
---মানে? তাহলে তুই যে গতকাল বললি ওই
ছেলে তোর পিছে পিছে ঘুরে।আবার একটু
আগে মোটর সাইকেলের শব্দ পেলাম তোর
গলার আওয়াজ পেলাম।আর এইভাবে
চিলেকোঠার ঘর কিভাবে সাজালি? এইটা
তো আমার.....
---কল্পনার মত তাই তো? কাল যখন তোর জন্য
থার্মোমিটার খুঁজতে ড্রয়ার ঘাটছিলাম
তখন সেইখানে ছোট্ট একটা ডায়রী পাই।
সেইটাতে তুই আজকের এই সন্ধ্যায় এই
চিলেকোঠার ঘরে কিভাবে আমাকে তোর
ভালোবাসার কথা বলবি তা লেখা ছিল।
কিন্তু মেয়েটা কে ছিল তা শিওর ছিলাম
না।আর তাই রাজীবের ব্যাপার টা বলে
তাকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু
তুই যখন আমাকে রাজীবের চরিত্র নিয়ে
মিথ্যা বললি তখনি বুঝে ফেললাম মেয়েটা
আর কেউ না আমি।আর একটু আগে আমার এক
চাচ্চু মোটর সাইকেল নিয়ে এসেছিল একটা
কাজে।চাচ্চুর বাইকের শব্দ শুনেই আমি
নিচে নেমেছিলাম তাই তুই আমার গলার
আওয়াজ পেয়েছিস।আর ওই ডায়রীটা তোর
ড্রয়ার থেকে চুরী করে এনেছিলাম সেইটা
অনুযায়ী এই রুম টা সাজিয়েছি।
আমি আর কি বলব হতবাক হয়ে তাকিয়ে
থাকলাম আমার পেত্নী টার দিকে।
মোমবাতির মৃদু আলোয় আমার রিমাকে
পেত্নী নয় বরং পরী পরী লাগছে।
এইবার আমি আমার পেত্নি নামক পরীটার
কাছে এগিয়ে গেলাম। তার হাত ধরে
বললাম- "হ্যা আমি তোকে ভালোবাসি।
অনেক অনেক ভালোবাসি।কিন্তু তুই ও কি
বাসিস আমায়? কখন থেকে?"।এইবার রিমা
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে উওর দিল-
"তুই যখন ছোটবেলায় আমার বেনীটা টেনে
ধরে দৌড় দিতি সেদিন থেকে তোকে
ভালোবাসি।আমার খেলনাগুলো,
চক্লেটগুলো কেড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলতি
তখন থেকে ভালোবাসি।আমাকে রাগিয়ে
গাট্টা খাওয়ার ভয়ে যখন লুকিয়ে থাকতি
তখন থেকে ভালোবাসি।সব স্বার্থপর,
খারাপ ছেলেগুলো থেকে যখন আমায়
আগলিয়ে রাখতে চাইতি তখন থেকেই
ভালোবাসি।নিজে ভিজে আমাকে ছাতার
নিচে নিয়ে নিরাপদে বাসায় নিয়ে আসতি
তখন থেকেই তোকে ভালোবাসি।"আমার
পেত্নীটার চোখে অশ্রু টলমল করছে।আমি
আলতো করে জলগুলো মুছে দিয়ে ওকে বুকে
টেনে নিলাম।
.
.
.
জানি না আমাদের পথচলা সহজ হবে কিনা।
আমাদের বাবা-মা আত্মীয়ের মধ্যে এই
সম্পর্ক মেনে নিবেন কিনা।কিন্তু আজ এই
মুহূর্ত থেকে আমি আর আমার পেত্নী
একসাথে থাকার ওয়াদা করলাম।মৃত্যুর আগ
পর্যন্ত থাকতে চাই।আপনারা প্লিজ এই
পেত্নী আর তার এই ভূত টার জন্য একটু দোয়া
করবেন।
1 comments:
Write commentsগল্পটা অনেক ভাল লাগছে
ReplyEmoticonEmoticon