Recent Posts

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গল্প ৪ . গল্প--অল্প স্বল্প প্রেমের গল্প

7:15 AM Add Comment

আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে
.
মেয়ে দেখেতে এসেছি । এটা ৫ নাম্বার
আগে যে কয়টা মেয়ে দেখেছি ওদের মধ্যে
কাউকেই তেমন একটা ভাল লাগেনি ।
আসলে ভাল লাগেনি বললে ভুল হবে । ওরা
সবাই দেখতে শুনতে ভাল ছিল কিন্তু আমার
আবার এখন বিয়ে করার একটুকু ও ইচ্ছা নাই
যার কারণে মাকে ভাল না লাগার অজুহাত
দেখিয়ে রেহাই পেয়েছে । আর না হলে
যদি ভুলেও মুখ ফসকে পছন্দ হয়েছে কথাটি
বের হয়ে যায় তাহলে আমার বিয়ে ফাইনাল
। কিন্তু আমার এখন বিয়া করার কোনো
ইচ্ছাই নেই । বিয়ে মানেই বউয়ের আঁচলে
নিজের স্বাধীনতাকে বেধে ফেলা । কিন্তু
একথা মাকে বুজাবে কে?? আমার
আম্মুজানের একটাই কথা আগামী এক
মাসের মধ্যেই নাকি ওনার ছেলের বউ ঘরে
চাই । মাকে না হয় একটু কষ্ট করে বুঝানো
যেত কিন্তু ঝামেলা বাধালো আমার
আদুরে বাশ দেওয়া ছোট বোন । ও তো সব
সময় মাকে কানপড়া দিয়েই যাচ্ছে যার
কারণে মাও অস্থির হয়ে উঠেছেন ।
কিন্তু আমি সবে মাত্র পড়াশুনা শেষ করে
একটা চাকরী পেয়েছি ইচ্ছা ছিল কয়েক বছর
যাক আগে নিজের পায়ে ঠিকমত দাড়াই
তারপর না হয় এইসব বিয়ে টিয়ে চিন্তা করা
যাবে । কিন্তু মা উঠে পড়ে লেগেছেন যে
আমাকে উনি বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন ।
কি আর করা এবার মনে হয় মা আমাকে
বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন । তাই বাধ্য হয়েই
মেয়ে দেখতে এসেছি ।
.
নিলা (আমার ছোট বোন) বলছিল যে এবার
যে মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি ঐ মেয়ে নাকি
খুব সুন্দর দেখতে ঠিক যেন পরীর মত । ওকে
নাকি ওর ভাবি হিসেবে চাই । আমি কিছু
বলিনি আর বললেও কেউ আমার কথা শেষে
শুনবেনা । তবে আমি মেয়ের ছবি
দেখেছিলাম ছবিতে তো দেখতে খুব ভালই
দেখাচ্ছিল কিন্তু এখন যে প্রযুক্তির যুগ
তাতে যেকোনো কাউকে ইডিট করে মিস.
ওয়ার্ল্ড বানানো যায় ।
.
বসে আছি আমার (হয়তবা) হবু শুশুড়জির
বাড়িতে । অনেক্ষণ ধরে বসে আছি কিন্তু
কনে আসার কোনো নাম নেই । হয়তবা উনি
উনার মুখে আটা ময়দা মাখছেন তাই একটু
দেরি হচ্ছে । কিছুক্ষণ পর আমার (হয়তবা)
হবু শুশুড়জি কনের মাকে কে ডাক দিলেন ।
-কইগো পায়েল কে নিয়ে আসো বেয়াইন
সাহেবা যে বসে আছেন ।
.
ওহ তাহলে কনের নাম পায়েল । বাহ সুন্দর
নাম তো দেখি মেয়ে দেখতে শুনতে যদি
ভাল হয় তাহলে এবার বিয়েটা করেই
ফেলবো । শুধু শুধু মাকে আর কষ্ট দেবনা ।
অবশেষে কয়েকটা মেয়ে আর আমার
(হয়তবা) হবু শাশুড়ি কনে নিয়ে হাজির
হলেন । কনের মুখ দেখছি ঘুমটা দিয়ে
কিছুটা ঢাকা যার কারণে মুখটা ভাল ভাবে
দেখা যাচ্ছেনা । অতঃপর কনেকে বসিয়ে
উনার মাথা থেকে ঘুমটা টা নামানো হল ।
আর আমি তো মেয়েকে দেখে একেবারে
ফিদা তখন মুখ থেকে নিজের অজান্তেই
বেড়িয়ে আসলো মাশাল্লা......
-আম্মুজান আমি বিয়ে করবো । (কথাটা
আমি মনে মনে বললাম)
.
না মেয়েটা তো সত্যিই খুব সুন্দর আর
চেহারায় ও খুব মায়া মায়া ভাব । ঠিক
যেন স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা । না আমাকে
এই বিয়ে করতেই হবে । তাই হাসিমুখ নিয়ে
নিচের দিখে তাকিয়ে তাকলাম । আমি
জানি যে মা আমার এই মাথা নিচের
দিকে করে রাখার মানে বুঝবেন । কেননা
এর আগে যে কয়টা মেয়ে দেখেছি
প্রত্যেকবারই আমি মায়ের দিকে অসহায়
দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম । আর এর মানেও
মা বুঝে নিয়ে ছিল যে মেয়ে আমার পছন্দ
হয়নি । কিন্তু আজকে যেহেতু আমার চাহনি
আর আচারণে পার্থক্য দেখা দিয়েছি
সেহেতু মা বুঝে নিবেনই যে মেয়ে আমার
পছন্দ হয়েছে । তারপর আমি নিলার দিকে
তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম । তখন
নিলা বলে উঠলো.....
-ভাবিকে কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে আর
আমার মনে হয় ভাইয়ার খুব পছন্দ হয়েছে ।
তাই নারে ভাইয়া?
(নিলা)
আমি ওর কথার কোনো জবাব দিলাম না
মাথা নিচের দিকে দিয়ে রাখলাম ।
তারপর সেদিনের মত চলে আসলাম ।
.
বাড়িতে এসেতো মা খুব খুশি আমার
বিয়েটা হচ্ছে বলে । আসলে আমি খুশি নয়
তা কিন্তু নয় মার চাইতে আমি আরো অনেক
গুণ বেশি খুশি । আর নিলার কথা কি বলবো
ও তো অলরেডি ওর অনেক বন্ধুদের কে
বিয়ের দাওয়াত পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে ।
.
আহ কি অপরুপ চেহারা সৃষ্টিকর্তা খুব নিপুণ
হাতে তৈরি করেছেন ওকে মাশাল্লা.....
তার কিছুদিন পর মায়ের সাথে গিয়ে
বিয়ের তারিখটা ঠিক করে চলে আসলাম ।
ইশ বিয়ের তারিখটা একটু পিছনে হয়ে
গেছে আরেকটু আগে বিয়ের তারিখটা হলে
ভাল হত ।
আর যাই হোক সব কিছু মাথায় রেখে দীর্ঘ
২০ দিন পর আমার মানে আমার আর
পায়েলের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হল ।
যাক এই কিছুদিন না হয় ওর সাথে ছুটিয়ে
প্রেম করা যাবে ।
.
রাতে রুমে শুয়ে আছি হঠাৎ মোবাইলের
রিংটোনের শব্দে কেপে উঠলাম ।
স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি পায়েল
ফোন করেছে । (পায়েলকে যেদিন প্রথম
দেখতে গিয়েছিলাম সেদিনেই আমি ওর
প্রেমে পড়ে গেছি যার করণে নিলার কাছ
থেকে ওর নাম্বারটা নিয়ে মোবাইলে সেভ
করে রেখেছিলাম । কিন্তু এখনো ফোন
করার সাহস হয়নি )
ওর ফোন দেখে আমার বুকের ভিতর কেমন
যেন কারেন্ট বইতে শুরো করলো । সাহস
করে ফোনটা রিসিব করলাম ।
.
-এত সময় লাগে ফোন ধরতে কোথায় ছিলেন
। (পায়েল)
(আর এই মেয়ে বলে কি প্রথম কথাতেই
ঝাড়ি না জানি বাকি জীবনটা কিভাবে
রাখবে)
-হ্যালো কে আমি তো আপনাকে চিনতে
পারলাম না । (আমি)
(চিনেও না চিনার ভান করলাম)
-আমি পায়েল ।
-ওহ আপনি জি বলুন ।
-আপনি কোথায়?
-জি বাসায় কিছু বলবেন ।
-বাসায় মানে এই সন্ধ্যা বেলা বাসায় কি
করছেন আপনি বাচ্চা ছেলে নাকি বন্ধুদের
সাথে বাইরে আড্ডা দেন না?
(আরে এই মেয়ে বলে কি.......আজব
ক্যারেক্টার)
-না মানে.....
_ওহ বুঝেছি মাকে খুব ভয় পান তাই না ।
-এই একটু আরকি

-হয়েছে হয়েছে বুঝেছি শুনোন আপনার
সাথে আমার জরুরি কথা আছে ।
-জি বলুন ।
-এখন ফোনে বলা যাবে না কালকে আমি
কফিশপে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো
বিকেল ৪ টার সময় চলে আসবেন ।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি চলে আসবো ।
-ঠিক আছে রাখি এখন ।
-ওকে বাই ।
এই কথা বলার পর মেয়েটা ফোন কেটে
ফেললো ।
এ কেমন মেয়েরে বাবা প্রথমেই যদি
এভাবে শাসন আর রাগি গলায় কথা বলে না
জানি বিয়ের পর কি করবে ।
.
পরদিন বিকেল ৪ টার সময় পায়েলের বলা
একটি কফিশপে বসে আছি । কিন্তু আমাকে
আসার কথা বলে উনার এখনো আসার নাম
নাই । প্রায় ২০ মিনিট দেরি করে উনি এসে
হাজির হলেন ।
-ওহ সরি সরি আমার আসতে একটু দেরি হয়ে
গেল । (পায়েল)
-না ঠিক আছে বসুন । এমনিতেই অভ্যাস হয়ে
যাবে । (আমি)
-অভ্যাস হয়ে যাবে মানে?
-না মানে কিছুনা । আচ্ছা আপনি কি যেন
জরুরি কথা বলতে চেয়েছিলেন ।
-আসলে কথাটা যে কিভাবে বলবো বুঝতে
পারছিনা ।
-আরে বলে ফেলুন সমস্যা নাই আমি তো
আপনার........
-কি বললেন?
-আজব ক্যারেক্টার....
-কি??
-না কিছু না ।
-আচ্ছা শুনোন আসলে আমার পক্ষে এ বিয়ে
করা সম্ভব নয় ।
(কথাটা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম ।
আমি তো ভেবেছিলাম বিয়ের পর কয়টা
বাচ্চাকাচ্চা নিবো সেটার বিষয়ে মনে হয়
কথা বলতে এসেছে । কিন্তু এই মেয়ে বলে
কি......আজব ক্যারেক্টার তো)
-কিন্তু কেন । বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি ।
(আসলে এ যুগের মেয়েদের এই সমস্যা ছাড়া
আর কি বা সমস্যা থাকতে পারে তাই
কথাটা জিজ্ঞাসা করলাম)
-আরে না না আমার এসব বয়ফ্রেন্ড-টয়ফ্র
েন্ড নেই ।
-তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা আছে । তাছাড়া আমি আগে
পড়াশুনা শেষ করতে চাই তারপর এসব বিয়ে
টিয়ে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবো ।
-কেন বিয়ের পড়ে না হয় পড়বেন আপনার
যতটুকু খুশি পড়ালেখা করবেন সমস্যা নাই
আমি আপনাকে পড়াবো ।
-শুনোন আমি ছেলেদের খুব ভাল করেই চিনি
বিয়ের আগে অনেক বড় বড় কথা কিন্তু
বিয়ের পর নিমপাতা ।
-সব ছেলেদের চিনেন মানে আপনি কয়জন
ছেলের সাথে চলাফেরা করেন তাছাড়া
নিমপাতা কিন্তু খুব উপকারী?
-ছেলেদের কে চিনতে হলে ছেলেদের সাথে
চলাফেরা করতে হয় নাকি । আমার এক
বান্ধবীর বিয়ের আগে ওর স্বামী বলেছিল
যে ওকে পড়াবে কিন্তু বিয়ের পর কিসের
কি ওকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করাচ্ছে ।
-ভালোইতো ভাল না?? মেয়েদের আবার এত
পড়াশুনা করে কি লাভ শুধু মাধ্যমিকটা পাশ
করে নিলেই চলবে তারপর রান্নাবান্না
ঘরের টুকুটাকি কাজ আর মায়ের কাছ থেকে
সন্তান লালন পালন শিখে নিলেই চলবে আর
কি দরকার ।
-কি??? তারমানে আপনি আমাকে দিয়ে এসব
করাবেন । আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে
করছিনা ।
-আরে না না আপনাকে এসব কাজ করতে
হবেনা শুধু সকালে আর সন্ধ্যা বেলা
আপনার হাতের ছোয়া মিশানো আমার
জন্য এক কাপ মিষ্টি চা তৈরি করলেই হবে

-এত শখ.......শুনোন আমি আপনাকে বিয়েই
তো করছিনা আর চা খাওয়ানো তো দূরের
কথা ।
-কিন্তু এখন আপনার কিছুই করার নাই বিয়ের
ডিল তো ফাইনাল হয়ে গেছে ।
-কিন্তু আমি এই বিয়ে কিছুতেই করতে
পারবোনা ।
-আচ্ছা একটা কথা বলি?
-হ্যা বলুন ।
-আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?
-পছন্দ-টছন্দ পরে হবে আগে যেভাবেই হোক
এই বিয়ে থামাতেই হবে ।
-কোনো লাভ নাই আমি মাকে জানিয়ে
দিয়েছি আমি আপনাকেই বিয়ে করবো
তাছাড়া বিয়ের তারিখই তো ঠিক হয়ে
গেছে ।
-আমি জানিনা যেভাবেই হোক এই বিয়ে
থামাতে হবে আর আপনি আমাকে সাহায্য
করবেন ।
-আজব ক্যারেক্টার....পাগল নাকি আমি
আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করছিনা
প্রথম দেখাতেই আমি আপনার প্রেমে পড়ে
গেছি যাকে বলে লাভ এট ফাস্ট সাইট ।
তাছাড়া মাকে আমি অনেক ঘুরিয়েছি
এবার যদি হ্যা বলার পর না বলি তাহলে মা
আমাকে কেট্টে ফেলে দেবে ।
-রাখেন আপনার লাভ এট ফাস্ট সাইট
এখানে আমি মরি আমার জ্বালায় আর
আপনি আছেন আপনার লাভ এট ফাস্ট সাইট
নিয়ে ।
-আচ্ছা আমি একটা কথা বুঝতে পারছিনা
আপনার যখন বিয়ের করার ইচ্ছে নাই
তাহলে এ বিয়েতে মত দিলেন কেন??
-আসলে আমি আমার বাবাকে খুব ভয় পাই
তাই বাবার ভয়ে কিছুই বলতে পারিনি
বাবা যা বলেন তাই হয় ।
-ওহ তাই তাহলে আর কি আপনাকে এই বিয়ে
করতেই হবে । তাছাড়া আমি কিন্তু ছেলে
হিসেবে খারাপ না তবে মাঝে মাঝে এই
একটু সিগারেট খাই এই আরকি......
-কি আপনি সিগারেট খান ।
-আরে না তেমন একটা না তবে বিয়ের পর
যদি আপনি মানা করেন তাহলে ছেড়ে এই
প্রমিজ করলাম । কেননা সুন্দরি বউদের কথা
কোনো স্বামী ফেলতে পারেনা ।
-ওহ শিট আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা ।
-এটা ভুল কথা আমাকে দিয়ে অনেক কিছু
হবে সেটা আপনাকে বিয়ে পরই বুঝিয়ে দেব

-আপনি আসলে একটা.....
-আমি কিছুনা...আচ্ছা বললেন না তো
আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা?
-রাখেন আপনার পছন্দ আমি আপনাকে
বিয়ে করলে না আপনাকে পছন্দ হবে ।
-কিন্তু আমাকে যে আপনার বিয়ে করতেই
হবে কিচ্ছু করার নাই ।
-না এখানে বসে আপনার সাথে ফাউল কথা
বলে লাভ নাই আমি যাচ্ছি ।
-এই শুনোন একটা সেলফি প্লিজ ।
-কি?
-না মানে বলছিলাম আপনার সাথে আমার
এই প্রথম দেখা তাই সেটা উপলক্ষে যদি
একটা সেলফি হয়ে যেত ।
-আপনাকে আমি.........
.
এই কথা বলেই মেয়েটা চলে গেল । তবে
মেয়েটা অনেক কিউট আর রাগ করলে
মেয়েটাকে আরো কিউট লাগে কিন্তু ও কি
সেটা জানে?? আর যাই হোক এই মেয়েকে
আমি ছাড়ছিনা যেভাবেই হোক এই
মেয়েকে আমি বিয়ে করবোই ।
আর এটা একটা ব্যাচেলর ছেলের শপথ....
.
পরদিন পায়েলের কলেজের সামনে দাড়িয়ে
আছি পায়েলকে দেখবো বলে কিন্তু
পায়েলকে তো দেখতে পাচ্ছিনা । সামনে
বিয়ে তাই অফিসে যাইনি অফিস থেকে
কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়েছি । হঠাৎ পিছন
থেকে কারো ডাকে ফিরে তাকালাম ।
চেয়ে দেখি পায়েল দাড়িয়ে আছে । ইশ
মেয়েটা এত সুন্দর কেন?? ও আর আমাকে
থাকতে দিবে না । ওকে যতবারই দেখি
তরবারই আমি নতুন করে ওর প্রেমে পড়ি ।
আবার ওর ডাকে আমার ঘুর কাটলো...
.
-এই মিস্টার এভাবে হা করে তাকিয়ে কি
দেখেন? আর এখানে কি?(পায়েল)
-না মানে তোমাকে দেখতে এসেছিলাম ।
(আমি)
-আমাকে দেখতে মানে? আর আপনি
আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?
-বারে কদিন পর তো এমনিতেই তুমি করে
বলতে হবে তাই আগে থেকে অভ্যাস করছি ।
আর তুমিও আমাকে তুমি বল সমস্যা নাই ।
-আমি আপনাকে তুমি করে বলবো কেন ।
-কেন আবার কি কদিন পর তো বিয়ে হলে
এমনিতেই তুমি করে বলবা তাই না তাহলে
এখন থেকেই বল ।
-এই যে আমি আপনাকে বিয়ে করছিনা ।
-কেন?
-আমার এখন বিয়ে করার ইচ্ছা নাই
তাছাড়া পড়ালেখা শেষ না করার আগ
পর্যন্ত আমি বিয়ে করবোনা সেটা আপনি
হন বা অন্য কেউ হোক ।
-কিন্তু বিয়ের তারিখ তো ঠিক হয়ে গেছে
বিয়ে যে আপনাকে করতেই হবে ।
-জি না আমি এই বিয়ে করছি না ।
-তাহলে দেখি আপনি কিভাবে বিয়ে
আটকান আর আমিও বলে দিচ্ছি আমি
তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে
করছিনা ।
-আপনার বিয়ের শখ আমি মিঠাবো ।
-সেটা না হয় বিয়ের পরই মিঠাবে আগে তো
বিয়েটা হোক ।
-আপনাকে আমি বিয়ে করলেনা ।
-বিয়ে তোমাকে করতেই হবে ।আচ্ছা তুমি
কিভাবে আমার বিয়ের শখ মিঠাবা একটু
বলবা আমাকে?
-সেটা সময় হলে বুজে নিবেন ।
-আচ্ছা তুমি সব সময় এরকম বদমেজাজি হয়ে
কথা বল কেন আমার মত একটু রোমান্টিক মুড
কথা বলতে পারোনা ।আজব ক্যারেক্টার...
-আপনি থাকেন আপনার রোমান্টিক মুড
নিয়ে আমি গেলাম আমার ক্লাস আছে ।
এই কথা বলেই পায়েল হন হন করে চলে
যাচ্ছিল......
আমি তখন ওকে আবার ডাক দিলাম...
-এই শুনো ।
-আবার কি বলবেন ।
-আসোনা একটা সেলফি তুলি ।
-আপনাকে আমি......
এই কথা বলে পায়েল আমার দিকে এমন
ভাবে তাকালো যেন আমাকে খুন করে
ফেলবে । আমি তো ওর এমন তাকানো দেখে
ভয়ে পিছন ঘুরে তাকালাম যাতে পায়েল
ওর রাগ কনট্রোল করে চলে যেতে পারে ।
আমি ২ মিনিট পর আড়চোখে পিছন ফিরে
তাকালাম চেয়ে দেখি ও এখনো আগের
জায়গায় চোখ মুখ লাল করে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে ।
ওর চাহনি দেখে আমি আর দাড়ালাম না
সামনের দিকে কয়েকপা এগিয়ে গেলাম ।
কিছুটা পথ এগিয়ে এসে আবার পিছন ফিরে
তাকালাম । চেয়ে দেখি পায়েল আর
দাড়িয়ে নেই ও ওর কলেজের ভিতর চলে
যাচ্ছে । যাক বাবা এবারের মত বাচা গেল
কিন্তু এই মেয়েটা এরকম কেন একটু ভাল
ভাবে কথা বলতে পারেনা??
কিন্তু অন্য সবার সাথে তো দেখি খুব ভাল
ভাবেই হাসিমুখে কথা বলে কিন্তু আমার
সাথে এরকম করে কেন আমি কি করছি?
আজব ক্যারেক্টার তো......
.
বেলা ২ টা বাজে আবার দাড়িয়ে আছি
পায়েলের কলেজের সামনে । পায়েল যদি
আবার দেখে আমি ওর কলেজের সামনে
দাড়িয়ে আছি তাহলে নির্ঘাত দৌড়িয়ে
মারবে । কিন্তু আমার আবার বেহায়ার
চামড়া । তবুও মনে এই বিশ্বাস আছে যে
পায়েল আমাকে তেমন কিছু বলবেনা ।
কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল । কিন্তু এসময়ে
হঠাৎ বৃষ্টি কেন একটু আগেই তো আকাশটা
কড়া রোদ ছিল কিন্তু কেন যে হঠাৎ করে
বৃষ্টি নেমে আসলো?? তাই আমি একটা
দোকানের সামনে গিয়ে দাড়ালাম
কিছুক্ষণ পর দেখলাম পায়েল দৌড়ে আমি
যে দোকানটায় আছি সেই দোকানটায়
আসছে । ইশ বৃষ্টি তে আমার বউটা ভিজে
যাচ্ছে.......
ও দোকানে এসে দাড়িয়ে আমাকে দেখে
একটু অবাক হল....
-আরে আপনি এখানে?(পায়েল)
-না মানে এমনি এসেছিলাম কিন্তু হঠাৎ
বৃষ্টি শুরু হল তো তাই এখানে এসে
দাড়িয়েছি । (আমি)
-এমনি এসেছেন নাকি আমাকে দেখতে
এসেছেন?
-তাও বলতে পারো...
-হয়েছে হয়েছে বুঝেছি এখন একটা রিকশা
ঠিক করুন বাসায় যাবো ।
(পায়েলের কথা শুনে আমি আমার নিজের
কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা যে ও
আমাকে বলছে রিকশা ঠিক করার জন্য । আর
ওর মুখ থেকে যখন আমি কথাটা শুনেছি আহ
কি ফিলংস.....তাছাড়া একটা ব্যাপার
খেয়াল করলাম যে পায়েল আমার সাথে
আগের চাইতে অনেক নরম গলায় কথা বলছে)
-কি হল দাড়িয়ে আছেন কেন যান একটা
রিকশা ঠিক করে আনুন আর এই নেন
ছাতাটা নিয়ে যান ।(ওর কথায় আমার ঘুর
কাটলো)
-ও হ্যা তাইতো দাও ছাতাটা । (এই বলে
যখন ওর হাত থেকে ছাতাটা নিতে গেলাম
তখন ওর হাতের স্পর্শ আমি অনুভব করলাম ।
তখন আমার শরীরে কেমন যেন একটা
কারেন্টের শখ খেলাম । এই প্রথম আমি
পায়েলের হাতের ছোয়া পেলাম... আহ কি
ফিলংস বলে বুঝানোর মত নয়)
.
তারপর গিয়ে পায়েলে জন্য একটা রিকশা
ঠিক করে আনলাম । ও তখন রিকশায় উঠে
বলল...
-কি ব্যাপার আপনি দাড়িয়ে আছেন কেন
উঠবেন না?? নাকি এখানে দাড়িয়ে
বৃষ্টিতে ভিজবেন? উঠুন বলছি ।
(পায়েলে কথা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে যে ও
আমাকে রিকশায় উঠতে বলছে আমি কেমন
যেন একটা ঘুরের মধ্যে আছি এটা স্বপ্ন নয়
তো)
-কি হল উঠুন বলছি?
আর দাড়ালাম না রিকশায় উঠে গেলাম ।
যখন রিকশায় উঠে বসলাম । তখন কেমন যেন
uneasy uneasy ফিল করছিলাম কিন্তু
আমাকে uneasy হলে হবেনা । কেননা
পায়েল আমার হবু ইস্ত্রি সরি স্ত্রী ওর
সাথে আমার প্রেম জমাতে হবে কেননা ও
আমাকে বিয়ে করতে চায়না আর আমিও
ওকে জুড় করে বিয়ে করবোনা । ওর মনে
আমার প্রতি প্রেম জাগাবোই ।
.
আমার ভিতর আত্না আমাকে বারবার বলছে
যে....
পাবেল তোমায় uneasy হলে হবে না
তোমাকে easy হতে হবে পাবেল take it
easy......
আমি যখন পায়েলের সাথে এক রিকশায়
বসে আছি তখন বারবার ওর শরীরের সাথে
আমার শরীর ঘেষে যাচ্ছে তখন ওর মাতাল
করা উষ্ণতা আমাকে ছোয়ে যাচ্ছে আর
এতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি । পায়েল
বৃষ্টিতে প্রায় ভিজে যাচ্ছে আর শীতে ওর
শরীরটা কাঁপছে । বৃষ্টিতে পায়েলের চুল
ভিজে গালের সাথে লেপ্টে আছে আর এ
অবস্থায় পায়েলকে দেখতে যে কি অপরুপ
লাগছে তা বলে বুঝাতে পারবোনা । হঠাৎ
আমার যে কি হল পায়েলের গাল থেকে
ভেজা চুল গুলু সরিয়ে পায়েলের মুখটা
আমার দিকে করে ওর স্পঞ্চের মত নরম
ঠোটে আমি ভালবাসার উষ্ণ ছোয়া একে
দিলাম ।.
পরক্ষণে আমার মনে হল আমি কাজটা কি
করলাম । কোথা থেকে আমার এর সাহস চলে
আসলো আমি বুজলাম না । কিন্তু আমি
অবাক হলাম যে পায়েল আমার এ কাজে
তেমন কিছুই বললনা । শুধু আমার দিকে
অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল ।
তারপর সারা রাস্তা পায়েলের সাথে
আমার আর কোনো কথা হলনা দুজনেই
পুরোটা রাস্তা নিশ্চুপ হয়ে ছিলাম । যখন
পায়েলের বাসায় পৌছালাম তখন ও চুপ করে
রিকশা থেকে নেমে গেল আর নেমে নিচের
দিকে তাকিয়ে বলল...
-ভাড়া মিঠিয়ে ভিতরে আসুন বৃষ্টিতে
আপনি প্রায় ভিজে গেছেন ।
তারপর পায়েল বাসার ভিতরে ডুকে গেল ।
আমিও রিকশা ভাড়াটা মিটিয়ে আমার হবু
শুশুড় বাড়িতে ডুকে গেলাম ।
আমাকে আমার হবু শাশুড়ি দেখেতো খুব
খুশি উনি তো আমাকে দেখে পুরো জামাই
আদর শুরু করলেন । এতে আমার কিন্তু খুব
ভালই লাগছে । তখন আমার হবু শাশুড়ি
আম্মা আমাকে বললেন....
-আরে বাবা বৃষ্টিতে ভিজে তোমার একি
অবস্থা আসো আসো তাড়াতাড়ি আসো
মাথাটা আগে মুছে না হলে শরীর খারাপ
করবে ।
-আরে মা এত ব্যাস্ত হবেন না আমি ঠিক
আছি ।
-তুমি চুপ করতো বাবাজি । এই পায়েল
তোয়ালেটা এনে পাবেল বাবাজির
মাথাটা মুছে দে তো ।
(পায়েল ওর মায়ের কথা শুনে আমার দিকে
বড় বড় চোখ করে তাকালো ।
আরে আরে এই মেয়ে আমার দিকে এভাবে
তাকাচ্ছে কেন আমি আবার করলাম । অবশ্য
রিকশায় আমি যে কাজটা করেছি না
জানি পায়েল আমার কতখানি খেপেছে ।
অবশ্য আমার ঐ কাজটা করা হয়তবা ঠিক
হয়নি কিন্তু আমার যে ঐ সময় কি হয়েছিল
নিজেই জানিনা)
আমার হবু শাশুড়ি আম্মা পায়েলের এরকম
চাহনি দেখে বলে উঠলেন....
-কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন যা
তোয়ালে নিয়ে আয় ।
-আম্মু তুমি যাও তো আমি এমনিতেই ভিজে
গেছি ।
-আমি বলছি যা তাড়াতাড়ি তোয়ালেটা
নিয়ে আয় ।
পায়েল ওর আম্মুর কথা শুনে রাগ করে
তোয়ালে আনতে চলে গেল । তোয়ালে
নিয়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে
তাকলো..
-কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন দে বাবাজির
মাথাটা মুছিয়ে দে ।
-আম্মু কি বল আমি উনার মাথা মুছিয়ে দেব
কেন উনার তো হাত আছে উনিই মুছে
নিবেন ।
-এত কথা বলিস কেন দে তো বাবাজির
মাথাটা মুছিয়ে আমি রান্না ঘরে গেলাম
দেখে আদি ওদিকের কি অবস্থা ।
ইশ আমার শাশুড়ি এত্ত ভাল কেন??
তারপর পায়েল কিছুটা বাধ্য হয়েই আমার
মাথাটা মুছিয়ে দিতে শুরু করলো । পায়েল
যখন আমার মাথাটা মুছিয়ে দিচ্ছিল ও
দ্বিতীয় বারের মত আমার এত কাছে
আসলো । আহ মনে হচ্ছে নিজের বউ যেন
আদর করে আমার মাথাটা মুছিয়ে দিচ্ছে ।
কিন্তু আমি ওর শরীরের মাতাল করা
উষ্ণতায় পাগল হয়ে যাচ্ছি না যেখোনো
সময় যেখোনো কিছু ঘটে যেতে পারে । তাই
আমি পায়েল কে বললাম যে.....
-আর লাগবেনা বউ । (আমি)
-বউ মানে??? আমি কি আপনার বউ হই
নাকি?
-না মানে আর লাগবেনা এবার যাও তুমি
তোমার ড্রেস চেঞ্জ করে ফেল...... বউ ।
(আমি বউ কথাটি এবার খুব আস্তে করে
উচ্চারণ করলাম যাতে পায়েল না শুনে)
.
তারপর পায়েল ওর রুমে চলে গেল । আহ কি
ফিলংস বিয়ের আগেই শুশুর বাড়িতে বসে
আছি তার উপর জামাই আদরও পাচ্ছি আহ
ভাবতে যেন কেমন লাগছে । না বসে
থাকতে ভাল লাগছেনা তাই উঠে আমি
আমার শুশুড় বাড়ি হেটে হেটে দেখতে
লাগলাম । হাটতে হাটতে আমি এক পর্যায়ে
পায়েলের রুমের দরজায় কাছে চলে আসলাম
। দেখি দরজা কিছুটা ফাক করা আমি কিছু
না ভেবেই ওর রুমে ডুকে গেলাম । রুমে
ডুকতেই দেখি পায়েল ওর ড্রেস চেঞ্জ করে
মাথার চুল গুলা আচড়াচ্ছে । ইশ ইচ্ছে করছে
আমি গিয়ে পায়েলের চুল আছড়িয়ে দেই ।
হঠাৎ ও আমাকে দেখে ভূত দেখার মত ভয়
পেল...
-আরে আপনি আমার রমে কেন আপনি না
ড্রইং রুমে বসে ছিলেন এখানে আসলেন
কিভাবে?
-এখানে আসলাম কিভাবে আবার হেটে
এসেছি তাছাড়া ওখানে একা বসে থাকতে
ভাল লাগছিল না ।
-তা হেটে কি অন্য কোনো রুম পেলেননা?
আমার রুমই আসতে হল?
-তোমার রুম আবার কি তোমার রুম আমার
রুম আমার রুম তোমার রুম সবই তো একি কথা

-আমার রুম আপনার রুম আবার আপনার রুম
আমার রুম এসবেরর মানে কি?
-মানে কিছুদিন পরেই তো তোমার সাথে
আমার বিয়ে হয়ে যাবে তখন তো তোমার
সব কিছু আমার আর আমার সব কিছু তোমার
হয়ে যাবে ।
-যখন হবে তখন দেখা যাবে এখন যান এখান
থেকে ।
-আরে দাড়াও না এত তাড়া কিসের
তাছাড়া বিয়ের পর যখন ফিরনী তে আসবো
তখন তো এই রুমেই থাকতে হবে তাইনা?
তাই রুমটা কে একটু ভাল করে দেখে নেই ।
.
এই কথা বলে রুমের আমি রুমের চারদিক ঘুরে
ঘুরে দেখতে লাগলাম । দেখতে দেখতে এক
পর্যায়ে আমি পায়েলের সামনে গিয়ে
দাড়ালাম । আহ মেয়েটা কে ভেজা চুলে
কি মায়াবী লাগছে ইচ্ছে করছে কি যে
করি.....
ধীরে ধীরে আমি পায়েলের খুব কাছা
কাছি চলে গেলাম ও তো ভয় পেয়ে আমার
দিকে তাকাচ্ছে.....
-আরে আপনি এভাবে আমার কাছে এসেছেন
কেন রুম দেখা শেষ হলে এবার যান গিয়ে
শাশুড়ির কাছ থেকে জামাই আদর পান ।
-আরে রুম দেখা তো শেষ হয়েছে কিন্তু
রুমের রাণীকে এখনো ভাল করে দেখার
বাকি আছে ।
-মানে?
-আরে তুমি এত খেপছো কেন একটু
রোমান্টিক হওনা কেন?
-দেখোন আপনি রিকশায় আমার ঠোঁটে.....।
কিন্তু তখন আমি কিছু বলিনি কিন্তু এখন
আবার যদি কিছু করেন তাহলে কিন্তু ভাল
হবেনা বলে দিচ্ছি ।
-তখন যখন কিছু বল নি তাহলে আমার
বিশ্বাস এখনো কিছু বলবেনা ।
এই কথা বলেই যখন ওর আরো কাছে যাচ্ছি
তখনি আমার হবু শাশুড়ি আম্মার ডাক.....
-এই পায়েল পাবেল বাবাজিকে নিয়ে
খাবার টেবিলে আয় তো ।
.
ইশ শুশুড়ি আম্মা ডাক দেওয়ার আর সময়
পেলেন না । আমার রোমান্টিক সীনে
পানি ঢেলে দিলেন কিন্তু আমি যে
পায়েলের রুমে সেটা উনি জানলেন
কিভাবে......আজব ক্যারেক্টার তো । তখন
পায়েল বলল....
-কি হল সরুন সামনে থেকে দেখছেন না মা
ডাকছেন? সরুন তো সামনে থেকে ।
-আরে এত খেপছো কেন সরছি তো ।
তারপর পায়েলের সাথে খাবার টেবিলে
গেলাম । পরে খেয়ে দেয়ে হবু শাশুড়ি
আম্মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেদিনের
মত চলে আসলাম ।
.
তার কিছুদিন পর আমার আবার পায়েলদের
ওদিকে যাওয়া পড়লো । আসলে আমি আমার
একটা ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম
বিয়ের কার্ড দেওয়ার জন্য আর পায়েলদের
বাসার সামনে দিয়েই ওদের বাসায় যেতে
হয় । তাই ভাবলাম যাবার সময় একবার
পায়েলকে দেখে যাবো । তো ফেরার সময়
পায়েলদের বাসায় উঠলাম । দরজায় কলিং
বেল বাজাতেই পায়েল এসে দরজা খুলে
দিল । ওর চেহারায় কেমন যেন দুষ্টু দুষ্টু ভাব
মনে হচ্ছে আগে থেকে জানে যে আমি
এখানে আসবো ।
.
-কেমন আছো? (আমি)
-আরে আপনি এখানে । (পায়েল)
-এখানে মানে এটা আমার হবু শশুড় বাড়ি
আমি আসবো না তো কে আসবে?
-ওহ তাই!! তা কি জন্য এসেছেন?
-আরে কি জন্য আবার এমিন বাবা-মাকে
দেখতে এসেছি । আর তুমিই বা কিরকম
আমাকে এখানে দাড় করিয়ে রাখবে নাকি
ভেতরে ডুকতে দেবে না???
-কি!!!!!আব্বু আম্মু কে দেখতে এসেছেন নাকি
আমাকে দেখতে এসেছেন? আর আমাকে
দেখা হয়ে গেলে এবার যান এবার নিজের
বাসায় যান । ভিতরে ডুকা যাবেনা ।
-আরে কি বল এসব ভিতরে ডুকা যাবেনা
মানে এটা আবার কি ধরনের কথা?
-ডুকা যাবেনা মানে যাবেনা ।
পায়েল যখন কথাটি বলল তখনি আমার হবু
শাশুড়ি আম্মা দরজার সামনে এসে পড়লেন

-আরে বাবাজি তুমি আসো আসো ভিতরে
আসো । আরে তুই ও না বাবাজিকে বাইরে
দাড় করিয়ে রাখছিস কেন ভেতরে ডুকতে
দিবিনা?(শাশুড়ি)
আমার হবু শাশুড়ি আম্মা যখন এই কথাটা
বললেন তখন পায়েলের মুখটা দেখার মত
হয়েছিল...
তারপর শাশুড়ি আম্মার সাথে গিয়ে
ভিতরে বসলাম । তখন শাশুড়ি আম্মা
বললেন...
-তোরা বসে গল্প কর আমি বাবাজির জন্য
নাস্তা নিয়ে আসছি ।
এই কথা বলেই শাশুড়ি আম্মা ভেতরে চলে
গেলেন ।
আমি আর পায়েল বসে কি বলবো বুঝতে
পারছিনা । পায়েল ও কিছু বলছেনা চুপ করে
আছে তবে চেহারায় তেমন রাগ নেই সেটা
বুঝা যাচ্ছে ।
একটু পর আমার একমাত্র হবু শালা আসল এসে
আমাকে বলল...
-আরে দুলাভাই আপনি কখন আসলেন?
(শালা)
-এইতোএইমাত্র আসলাম তুমি কেমন আছো?
(আমি)
-জি দুলাভাই ভাল আছি । আচ্ছা দুলাভাই
আমাকে ৫০০ টাকা দিনতো?
এই কথা বলার সাথে সাথেই পায়েল বলে
উঠলো....
-আরে তুহিন তুই কার কাছে টাকা চাচ্ছিস
ওনি কে যে তকে টাকা দিবে আমাকেই
বললে কি আমি দিতাম না? বাইরের
লোকের কাছে টাকা চাচ্ছিস কেন
তাছাড়া উনার সাথে তো আমার এখনো
বিয়ে হয়নি যে তুই উনাকে দুলাভাই
বলছিস ?
(পায়েল)
-আরে আপু তুমি চুপ কর তো দুলাভাই তো
বলতে গেলে আমাদের ঘরের মানুষ উনার
কাছে টাকা চাইলে সমস্যা কোথায়
তাছাড়া বিয়ে হয়নি কিন্তু কয়দিন পরতো
এমনিই হবে তাহলে দুলাভাই বলে ডাকতে
সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা আছে তাছাড়া আমি কি তকে
টাকা দেইনা যে উনার কাছে টাকা চাইতে
হবে ।
-আরে তোমার কাছে থেকে তো সব সময়ই
টাকা নেই কিন্তু এখন থেকে দুলাভাইয়ের
কাছ থেকে টাকা নিবো আর তোমাকে ২০০
টাকার কথা বললে ৫০ টাকা দিতে কিন্তু
এখন দুলাভাইয়ের কাছে যা চাইবো তাই
পাবো তাইনা দুলাভাই?
-হ্যা হ্যা আর তুমি আমার একমাত্র শালা
তোমাকে টাকা দেওয়া কোনো ব্যাপার
না ।
তারপর আমি আমার মানিব্যাগ থেকে
একটা ৫০০ টাকার নোট ওর হাতে ধরিয়ে
দিলাম আর এতে আমার হবু শালাটা খুশি
মনে বাইরে চলে গেল ।
তারপর আমি পায়েলের দিকে তাকাতেই ও
আমাকে বলল..
-আপনি ওকে টাকাটা দিলেন কেন?
(পায়েল)
-বারে আমার একমাত্র শালা টাকা
চেয়েছে দিবোনা? এতে দুষের কি হল?
(আমি)
-এখন যদি ও টাকা নিয়ে খারাপ কাজে
লাগায় তখন কি হবে?
-আরে তুমি চিন্তা করনা আমার শালা
এরকম না ।
-হুম আপনি জানেন ও এরকম না ।
-আচ্ছা একটা কথা বলি?
-এত ভং করছেন কেন বলে ফেলুন ।
-আচ্ছা আমাকে কি তোমার সত্যিই পছন্দ
হয়নি বা তুমি কি আমাকে আসলেই বিয়ে
করবেনা? দেখো তুমি যদি আমাকে বিয়ে
করতে না চাও তাহলে তোমাকে আমি জুড়
করে বিয়ে করবোনা ।
কথাটা বলার পর দেখলাম পায়েল কিছুই
বলেছে না কেমন যেন চুপ করে আছে । তাই
আমিও আর কিছুই বললাম না চলে আসলাম...
.
রাতে রুমে বসে ভাবছি...
আচ্ছা সত্যি কি পায়েল আমাকে পছন্দ
করেনা বা ও কি আমাকে বিয়ে করতে
চায়না । আচ্ছা দেখি একবার যাচাই করে
এতে প্রমাণ হয়ে যাবে যে ও আমাকে বিয়ে
করবে কিনা । এগুলা ভাবতে ভাবতে
পায়েলকে ফোন দিলাম প্রথমবার রিং
হতেই ও আমার ফোন রিসিব করলো । আরে
কি ব্যাপার ও কি আমার ফোনের অপেক্ষায়
ছিল? হতেও পারে আসলে এই মেয়েকে বুঝাই
মুশকিল পুরাই একটা আজব ক্যারেক্টারের
মেয়ে ।
.
-হ্যালো । (আমি)
-জি বলুন । (পায়েল)
(আরে বাব্বা কন্ঠে দেখি পুরাই মধু ঢেলে
দিছে কিন্তু ও তো আগে আমার সাথে
এভাবে কথা বলতোনা যখনি ফোন দিতাম
কেমন যেন একটা বিরক্ত বোধ করতো যেটা
আমি ওর কন্ঠ শুনেই বুঝে ফেলতাম আর এ
কারণেই যখনি ওকে ফোন দিতাম কেমন
যেন একটা রাগি গলায় কথা বলতো
)
-কি করছো?
-এইতো বসে আছি আপনি কি করছেন?
-এইতো তোমার সাথে কথা বলছি । আচ্ছা
তোমার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে

-জি বলুন ।
-না ফোনে বলা যাবেনা কালকে একটু দেখা
করতে পারবে ।
-জি পারবো কোথায় আসতে হবে বলুন ।
-কালকে বিকেল ৪ টার সময় পার্কে চলে
এসো ।
-ঠিক আছে আসবো ।
-ঠিক আছে এখন রাখি শুভ রাত্রি ।
-শুভ রাত্রি ।
.
বিকেলে পার্কে যাবো গাড়ি খুজচ্ছি
কিন্তু অনেক্ষন ধরে দাড়য়ে আছি গাড়ি
পাচ্ছিনা । অবশেষে গাড়ি পেলাম...
যখন পার্কে পৌছালাম এসে দেখি পায়েল
এসে গেছে । আমি ঘড়িতে চেয়ে ৪ টা ১৫
বাজে । ইশ আজ আসতে একটু দেরি হয়ে গেল
মনে হয় । আমি ওর সামনে গিয়ে
দাড়ালাম......বাহ আজ তো দেখি পায়েল
খুব সেজে গুজে এসেছে । হলুদ ড্রেসে ওকে
ঠিক হলুদ পরীর মত লাগছে । ইশ মেয়েটা এত
সুন্দর কেন.........কিন্তু ও এভাবে সেজে গুজে
এসেছে কেন?......
-সরি আমার মনে হয় আসতে একটু দেরি হয়ে
গেল?(আমি)
-না ঠিক আছে ।(পায়েল)
-তো কেমন আছো?
-এইতো ভাল আছি আপনি কেমন আছেন?
-এই আছি ভালই । তো কখন এসেছো?
-এইতো ২০ মিনিট হবে ।
-আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?
-জি না আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি ।
-ওহ । তোমাকে কিন্তু আজ খুব সুন্দর
লাগছে...!
-ধন্যবাদ । আচ্ছা আপনি কি যেন বলতে
চেয়েছিলেন?
-হ্যা বলবো আর বলার জন্যই তো এসেছি ।
-তাহলে বলুন কি বলবেন?
-না মানে আমাকে কি সত্যি তোমার পছন্দ
হয়নি?
-এ কথা বলেছন কেন?
-না তুমি তো আমাকে বিয়ে করতে
চাচ্ছোনা আর শুনো আমাকে যদি তোমার
পছন্দ না হয় আর যদি বিয়ে করতে আপত্তি
থাকে তাহলে বলতে পারো আমি তোমাকে
জুড় করে বিয়ে করবোনা । আর তোমাকে জুড়
করে বিয়ে করেও কোনো লাভ হবে এতে
করে না তুমি আমাকে বুঝতে পারবে না
আমি তোমাকে বুঝতে পারবো । আর তুমি
যদি রাজি থাকো তাহলে ঠিক আছে কিন্তু
তুমি যদি রাজি না থাকো তাহলে আমি
মাকে বলে এই বিয়ে বন্ধ করাবো । আর পরে
না হয় অন্য মেয়ে দেখবো ।
(কথাগুলু একটানা বলে গেলাম কিন্তু আমি
পায়েলের রিয়েক্ট দেখে সত্যি খুব অবাক
হলাম)
-কি বললেন আবার বলুন তো দেখি আপনার
সাহস কত .....বিয়ে করবেন না আমায়
তাইনা? যদি আপনি আমাকে বিয়ে না
করেন তাহলে আমি আপনাকে খুন করে
ফেলবো । আপনি কি পেয়েছেন হু? সবাইকে
দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে সব কিছু ঠিক
হয়ে গেছে আর এখন বলছেন বিয়ে করবেন না
। দেখি আপনি কিভাবে বিয়ে না করেন
আমি আপনাকে জুড় করে বিয়ে করবো আর
বিয়েটা হয়ে যাক তারপর আপনার খবর
আছে...আসলে আপনি একটা আজব
ক্যা..রেক্টারের লোক ।
(ওর কথা শুনে যতটা অবাক হয়েছি ঠিক ভাল
লেগেছে ওর মুখ থেকে আজব ক্যারেক্টার
কথাটি শুনতে । মেয়েটা খুব সুন্দর করে
আজব ক্যারেক্টার কথাটি বলেছি কথাটি
বলার সময় কেমন তোতলাচ্ছিলো)
-তাই নাকি কিন্তু আমাকে খুন করলে তো
তুমি ফেসে যাবে ।
-ফাসলে ফাঁসবো ।
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আমাকে খুন করতে
হবেনা তোমাকে আমি বিয়ে করবো কিন্তু
আমাকে তো তোমার পছন্দ হয়নি মনে হয়?
-আমি কি এক বারও এই কথা বলেছি যে
আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি ।
-তার মানে তুমি বিয়েতে রাজি ।
-(পায়েল কিছু বললনা)
-কি হল কথা বল?আচ্ছা তোমাকে কথা
বলতে হবেনা । একটা ছিল?
-বলুন ।
-না মানে এতক্ষণ যা কিছু বলেছি সব কিছু
কিন্তু মিথ্যে ।
-মানে....!
-মানে আমি এতক্ষণ তোমাকে যাচাই করে
দেখছিলাম যে আমাকে তুমি বিয়ে করতে
চাও কিনা । আসলে তুমি যদি আমাকে
বিয়ে করতে না চাও তাহলেও আমি
তোমাকে বিয়ে করবো ।
-কি???
-হ্যা এটাই ।
-আপনি...আপনি সত্যি একটা আজব
ক্যারেক্টারের লোক । আমি আপনাকে
বিয়ে করবোনা ।
-সত্যি তো?
-না সত্যি না ।
-তার মানে কনে রাজি । আচ্ছা তোমার
হাতটা ধরি?
-না ।
-শুধু একবার ধরবো প্লিজ ধরি ।
-না ।
-প্লিজ একবার ।
-ওই আমি আপনার টিচার নাকি যে হাত
ধরতে হলে অনুমতি লাগবে জুড় করে ধরতে
পারনেনা??
আমি ওর কথা শুনে মুচকি হাসলাম। তারপর
আস্তে করে ওর কোমল হাতটা আমার হাতে
বন্দি করলাম । পায়েল লজ্জায় মাথা
নিচের দিকে করে রাখলো ।
-আরে বাহ লজ্জা পেলে তোমাকে তো খুব
সুন্দর লাগে ।
.
তারপর পায়েল কে নিয়ে একটা নতুন
জীবনের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম...

Popular Posts