সত্যি যদি কাউকে ভালবেসে থাকেন তাকে ভালবাসার কথাটা বলে দিন

5:38 PM


একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবে মাত্র অনার্স শেষ করেছে শুভ। এখন একটা জব তার জন্য আবশ্যক হয়ে পড়েছে। কারন ফ্যামিলি থেকে টাকা আর কতো নিবে। এই নিয়ে নিজেই নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগে প্রতিনিয়ত।
অবশেষে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে একটা জবের জন্য আবেদন করে সে। আজ তার ইন্টারভিউ তারিখ।

আগে থেকেই মোটামুটি ভালো একটা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে শুভ। গতরাতে হালকা স্টাডি করে শুয়ে পড়েছে... আজ সকাল ১০ টায় ইন্টারভিউ টাইম।
ঘুম থেকে ৭ টায় উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলো। তারপর অফিসিয়াল ড্রেস পড়ে বাসা থেকে একটু আগেই বেড়িয়ে পড়লো। কারন, বলা তো যায় না - ঢাকায় যে জ্যাম।
গন্তব্য মতিঝিল।

আজ শুভ কে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। পরিচিত টি-শার্ট, জিন্স ছেড়ে ফরমাল ড্রেসে। হাতে ঘড়ি, ধবধবে সাদা শার্ট, কালো রঙের প্যান্ট এক কোথায় বলা যায় অপূর্ব।

যথা সময়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির শুভ। একে একে সবার শেষেই ডাক এলো শুভর। বলা চলে ভালভাবেই ইন্টারভিউ বোর্ডটা ফেস করেছে শুভ। খুব একটা বেগ পেতে হয় নি। অফিস থেকে জানিয়ে দেয়া হলো যারা যারা চাকরির জন্য নির্বাচিত হবেন, তাদেরকে কন্টাক্ট করে জানিয়ে দেয়া হবে।

অফিস থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো শুভ। পরিষ্কার আকাশ সাথে রোদের তিব্রতাও কিছুটা কমে এসেছে। রাস্তায় হালকা জ্যাম আছে অবশ্য। এই মধ্যেই বাস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার গন্তব্যে। একটা সময় বাস এসে দাঁড়ালো সিটি কলেজ গেটে। বাসে খুব একটা স্পেস নেই। সিট প্রায় সব ব্লক অলরেডি। এমতাবস্থায় হটাৎ অনেকগুলা মেয়ে উঠলো বাসে। ২/৩ জন যদিও সিট পেয়েছে বাকিরা সবাই দাড়িয়েই আছে। মহিলাদের জন্য বরাদ্ধ করা সিটগুলাও খালি নেই। মেয়েগুলা প্রায় শুভর বসার সিটের কাছাকাছি এসেই দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে একটা মেয়েকে দেখে তো শুভর খুব ভালো লেগে যায়। হালকা পাতলা গড়নের মেয়েটি। ইতিমধ্যে মেয়েটির দাড়িয়ে থাকাটা শুভর কাছে দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। শুভ সিট ছেড়ে উঠতে যাবে এমন সময়ে মেয়েটি শুভ কে অবাক করে দিয়ে বলে - এই যে মিস্টার, কোথায় যাচ্ছেন ??

শুভঃ না মানে-
মেয়েঃ কি মানে মানে করছেন?
শুভঃ না মানে, আপনি এখানে বসুন। আমি বরং দাড়িয়ে থাকি। আমার দাড়িয়ে থাকতে কোন সমস্যা হবে না।
মেয়েঃ আপনাকে উঠতে বলেছি ?? চুপচাপ বসে থাকেন।

কি আর করা - শুভ আবার বসে যথাস্থানে বসে পড়লো।

৫ মিনিট চুপচাপ উভয়েই -
আবার ৫ মিনিট পর মেয়েটি বললো - এই যে আমার ব্যাগটা রাখেন তো একটু, দাড়াতে কষ্ট হচ্ছে তো দেখতে পাচ্ছেন না ?

মেয়েটি এবার বলো উঠলো - আমারও দাড়িয়ে থাকার অভ্যাস আছে, জাস্ট ব্যাগটা রাখতে বলেছি আপনাকে unsure emoticon

এইদিকে বাস তো চলছেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
কিছুক্ষন পর মেয়েটি শুভ কে আরো চমকে দিয়ে তার সেল নাম্বারটা চেয়ে বসলো -

মেয়েঃ এই যে মিস্টার- আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিন তো ??
শুভঃ কেন!!
মেয়েঃ দিতে বলেছি তাই দিবেন।
শুভঃ ভালো যেহেতু লেগেই গেছে দিতে তো সমস্যা নেই ( মনে মনে )।
এই নিন বলে নাম্বারটা দিলো। কিন্তু মেয়েটি তার নাম্বার শুভ কে দেই নি।

মেয়েটি তার গন্তব্যের প্রায় কাছাকাছি। নামার আগে শুভ কে -
মেয়েঃ এই যে শুনেন - আমি একটু এমনই, একটু বেশীই পেইন দিয়েছি আপনাকে।
কিছু মনে করবেন না ।।
শুভঃ আরে নাহ! আমি কিছু মনে করি নি। ইট'স ওকে।

তারপর মেয়েটি শুভর কাছ থেকে তার ব্যাগটি নিয়ে বাই বলেবাস থেকে নেমে পড়লো।

মেয়েটি বাস থেকে নেমে যাবারই পরক্ষনেই শুভর কেমন জানি লাগছে। কি একটা যেন ছেড়ে চলে যাচ্ছে।। কিসের মায়ায় যেন নিজেকে জড়িয়ে পেলেও হারিয়ে ফেলেছে তাকে।

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে কেন যে তার নাম্বারটা চাইলাম না। কেন যে তার নামটা পর্যন্ত জেনে নিতে পারলাম নয়া। এসব ভাবতে ভাবতেই শুভ যে কখন তার গন্তব্যে চলে আসছে সেই দিকে খেয়ালই করে নি। হটাৎ হেল্পারের ডাকেই তার ভাবনার পরিসমাপ্তি ঘটলো।

বাস থেকে নেমে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেলো। তারপর বিকেলে হালকা ঘুম দিলো। কি যেন অদ্ভুত চিন্তায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। বারবার মেয়েটির চেহারাটাই সামনে ভাসতে লাগলো। কি ক্যায়ারিং ছিল, নিজে সিটে নয়া বসে আমাকেই বসে থাকতে দিলো। এতো ক্যায়ারিং কাউকেই তো লাইফে চাই আমার। এসব চিন্তা এখন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

হটাৎ শুভর মোবাইলের রিংটোন ভেজে উঠলো। মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে একটা অপরিচিত নাম্বার। শুভ ভাবলো এই বুঝি সেই ফোন দিয়েছে । তারপর আর কালক্ষেপণ নয়া করে সাথে সাথেই ফোনটা রিচিভ করতেই ওপাশ থেকে পুরুষকণ্ঠের আওয়াজ। যে অফিসে আজ ইন্টারভিউ দিয়েছে সেখান থেকেই ফোনটা এসেছে। অফিস থেকে তাকে জানানো হলো তার জবটা হয়ে গেছে। সামনের মাস থেকেই তাকে জয়েন করতে বলেছে। শুভ তো আনন্দে আত্মহারা, যাক এতদিনে নিজের একটা কিছু হইলো। কিন্তু এতো আনন্দের মধ্যেও তার মধ্যে একটা বিষাদের ছায়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। মেয়েটিকে তার মনের কথাটা বলতে নয়া পারা।

৩ দিন পর -

শুভ বসে বসে বই পড়ছে। এমন সময় একটা অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
শুভ ফোনটা রিচিভ করতেই ওইপাশ থেকে ময়ূরকণ্ঠী একজন বলে উঠলো -
কেমন আছেন আপনি ??

শুভঃ কে বলছেন আপনি ?
ময়ূরকণ্ঠী মেয়েটিঃ আমি যেই হইনা কেন! সেটা জানাটা আপনার জরুরি না। আপনি কেমন আছেন সেটাই আমার জানাটা জরুরি।
শুভঃ তার চিনতে আর বিন্দুমাত্র দেরি হলো না কে এই মেয়েটি।
শুভ কান্না এবং খুশির মিশেলে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো - আমি ভালো নেই একদমই frown emoticon কোথায় আছেন এখন আপনি? আপনার সাথে আমার এখনই দেখা করতে হবে।
মেয়েঃ কেন দেখা করতে চান আপনি?
শুভঃ আমি জানি না কেন! তবে এটা জানি আপনার সাথে আমার দেখা না হওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না।
মেয়েঃ ওকে বাবা- দেখা করবো তো ! দেখা করবো না তা তো বলি নি।
কখন দেখা করবেন?
শুভঃ এখনই
মেয়েঃ এখনই !!! এখন তো সম্ভব না আমার জন্য।
শুভঃ আমি কিছু জানি না , এখনই আপনাকে আমার সাথে দেখা করতে হবে।
মেয়েঃ আচ্ছা ! আসবো - কোথায় আসতে হবে বলুন?
শুভঃ রবীন্দ্র সরোবরে আসেন। ঠিক আছে?
মেয়েঃ হুম ঠিক আছে। আসেন ।

শুভঃ ওহ! আপনার নামটা প্লিজ!
মেয়েঃ মারিয়া , আপনার?
শুভঃ শুভ! শুভ আমার নাম।

ওকে আসছি আমি , তাহলে দেখা হচ্ছে আপনার সাথে smile emoticon
মেয়েঃ অবশ্যই wink emoticon

তখন বিকেল ৪ টা। শুভ এসে দাড়িয়ে আছে রবীন্দ্র সরবোরে। আজ তার মনের কথা খুলে বলবেই - এটাই তার প্রতিজ্ঞা।

৫ মিনিট পরই মারিয়া এসে হাজির। ঠিক শুভর সামনেই।

মারিয়াঃ এই যে, আমি এসেছি । কেমন আছেন আপনি?
শুভঃ ভালো নেই আমি - সেটা তো বলেছি আপনাকে frown emoticon
মারিয়াঃ কেন ভালো নেই জানতে পারি কি ?
শুভঃ আমি কি যেন হারিয়ে ফেলেছি আর সেখানেই আমার যতো অতৃপ্তটা। প্রতিটাক্ষণ অস্থরতায় কাটছে। কাকে যেন খুব করে চাই, আর সেই মানুষটাকে খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছে করে।
মারিয়াঃ কাকে খুব করে চাইছেন শুনি?
শুভঃ আপনাকে !!! আপনাকে ছাড়া আমি জাস্ট কিছু ভাবতে পারছি না। কেন আমার এতো খারাপ লাগবে, কেন এতো মিস করবো হটাত করেই আপানাকে। আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি , সেটা কি আপনি বুঝতে পারছেন না ? গত ৩ দিন আমার কাছে ৩ টা যুগের মতো মনে হয়েছে।
মারিয়াঃ না বললে বুঝবো কি করে ?
শুভঃ এখন তো বললাম ।
মারিয়াঃ আমিও একটু সময় নিয়েই দেখলাম আপনার প্রতি আমার ভালবাসা জন্মেছে কিনা। অবশেষে নিজের সাথে যুদ্ধ করে নিজেই হেরে গেলাম। এই কয়দিনে আমিও বুঝতে পেরেছি আমিও আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। তাই তো আর বেশিক্ষণ নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি। আপনাকে ফোন দিয়ে দিলাম।

শুভঃ আচ্ছা আমরা কি এখনো আপনি করেই সম্বোধন করবো একে অপরকে?
মারিয়াঃ নাহ! তুমি করেই বলবো।
শুভঃ তুমি, তুমি, তুমি kiki emoticon
মারিয়াঃ kiki emoticon kiki emoticon kiki emoticon

৫ বছর পর - - - -- -- - -- - -- -- - --

হ্যাপি এণ্ডিং ই হয়েছে তাদের। অফিস, সংসার এবং একমাত্র ছেলে নিয়ন কে নিয়ে সুখের সংসার।

একদিন হটাৎ -

শুভঃ জানো মারিয়া !
মারিয়াঃ কি?
শুভঃ তুমি আমার সকল অপূর্ণতা কে পূর্ণ করে দিয়েছ।
আই লাভ ইউ heart emoticon
মারিয়েঃ আর,আমি এতই সোভাজ্ঞবান যে তুমি আমার পূর্ণতা কে আরো অনেকগুন বাড়িয়ে দিয়েছ ।
আই লাভ ইউ টু heart emoticon heart emoticon heart emoticon

মরালঃ প্রতিটা সম্পর্কই হোক নির্মল।
প্রতিটা সম্পর্কেই থাকুক পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ।
প্রতিটা সম্পর্কই পূর্ণতা পাক।

তাই সত্যি যদি কাউকে ভালবেসে থাকেন তাকে ভালবাসার কথাটা বলে দিন। যাকে ছাড়া আপনার লাইফ অপরিপূর্ণ, তাকে নিয়ে বাকিটা লাইফ পরিপূর্ণতায় কাটুক আপনার smile emoticon

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »

Popular Posts