নিসার সাথে রাফিনের মতো একটা ছেলের বিয়েটা হয়েছে নিসার পরিবারের অমতে । রাফিনের পরিবার বলতে কিছুই নেই । মা নেই , বাবা নেই । কাকা মামারা থেকেও নেই । এমন একটা ছেলের প্রেমে পড়ে নিসা । ছেলেটার জন্য , বড়লোক বাবার আরামের ফ্ল্যাট ছেড়ে নিসা চলে এসেছে রাফিনের দুই বুমের বাসায় । বাথরুম আর রান্নাঘর ছাড়া , সুবিধা বলতে আর কিছুই নেই সেখানে । তবুও নিসা সুখি । মাঝে মাঝে নিসা রাফিনের বুকে মাথা রেখে বসে থাকে । তখন রাফিন নিসার চুলে আলতো করে আঙুল চালায় । সেই মুহূর্তে , অনেক না পাওয়া সুখের লিস্টটা ছোট হয়ে যায় ।
রাফিন হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে । পাটিতে বসে খায় সে , ঘরে ডাইনিং টেবিল নেই । নিসার খেতে কষ্ট হয় , তাই সে চেয়ারে বসে খেয়েছে কিছুদিন । এখন সে পাটিতে বসেই খেতে পারে । বিয়ের দুই মাসে এগুলো শিখে নিয়েছে সে ।
রাফিন দেখে , একটা প্লেটে কিছু ভাত , একটু ভাজি আর ডাল । রাফিনের পেট চো চো করে ওঠে । এটুকু খাবারে ওর কিছুই হবে না । তবুও চালিয়ে নিতে হবে । চালিয়ে নেয়ার অভ্যাস রাফিনের আছে ।
তুমি খেয়েছ ?
হ্যা খেয়েছি । তুমি খাও ।
ক্ষুধা আছে এখনও ? আমার সাথে খাবে একটু ?
না ঠিক আছে , আমি খেয়েছি । তুমি খাও , সারাদিন কিছুই তো খাও নি বোধ হয় ...
রাফিন মুগ্ধ হয় নিসার কথায় । কি সহযেই বুঝে গেল , আমি আয সারাদিন না খেয়ে আছি !
রাফিন তৃপ্তি নিয়ে খেতে থাকে । নিসা বসে থাকে পাশে । খারাপ লাগে ওর । ওর খুব শখ , রাফিনের পাতে সে কিছু তুলে দিবে , রাফিন কে সে পেট পুরে খেতে দেখবে । বিয়ের দুই মাসে রাফিন কে কোনদিন পেট ভরে খেতে দেখেনি নিসা । এটুকু খেয়ে ওর কি হয় , নিসার মাথায় সে প্রশ্নের কোন উত্তর আসে না ।
। । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । । ।
রাত বারোটা বাজে প্রায় । নিসা রান্নাঘরে এসে খাবার মতো কিছু খুজছে । এতগুলো বয়াম , কিন্তু সব খালি ।
একটা বয়ামে একটু বিস্কিটের গুড়া পায় নিসা । আধা মুঠিও না । কিন্তু কিছু তো ! নিসা সেটা মুখে পুরে নেয় । এখনও খাওয়ার যোগ্য আছে । তারপর তিন গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে নেয় নিসা ।
রাতে ঘুম ভেঙে গেলে নিসার কিছু খেতে হয় । ফ্রিজ খুলে হয়তো একটা আপেল নিয়ে খেত সে এখন । অথবা চা বানিয়ে টোস্ট বিস্কিট । কিন্তু এখানে তার কিছুই নেই । এতখানি পানি খেয়ে নিসার পেট ভারি হয়ে যায় । কিন্তু ক্ষুধা মিটে না ওর । পেটের ভেতর গুর গুর শব্দ যেন রাতের ঝি ঝি পোকাকেও হার মানায় !
নিসা ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে ঘুরে দাড়াতেই অবাক হয়ে রাফিনের দিকে তাকিয়ে থাকে । রাফিন হা করে তাকিয়ে আছে নিসার দিকে ।
তুমি কিছু খাও নি ?
নিসা মাথা নিচু করে থাকে ।
ঘরে কিচ্ছু নেই ?
নিসা রাফিনের দিকে তাকিয়ে কেদে দেয় ।
সরি রাফিন , এবারের মাসে খরচ বেশি করে ফেলেছি !
রাফিন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না । সরি কার বলা উচিত আর কে সরি বলছে ? মেয়েটা অভাব চোখে দেখেনি । সেই মেয়ে রাতে আধপচা বিস্কিটের গুড়া খাচ্ছে ! রাফিন কিছু না বলে বেড়িয়ে যায় । পিছন থেকে নিসার ডাক না শুনেই ।
মেডিকেলের সামনের দোকান থেকে একটা রুটি আর দুটো কলা কিনে আনে রাফিন । গতকালের বাস ভাড়া দিয়ে । ঘরে বউ না খেয়ে থাকবে , আর রাফিন পকেটে টাকা নিয়ে ঘুরবে ? সেটা সম্ভব না ।
এগুলো খাও । পকেটে টাকা ছিল না , নইলে ভালো কিছু নিয়ে আসতাম । আর না খেয়ে আছ , আমাকে কেন বললে না ?
বলতে বলতে রুটির প্যাকেট খুলতে থাকে রাফিন । নিসা কিছু বলে না । চুপ করে রাফিনের পাগলামো দেখে । ছেলেটা নিজেও জানে না , ও কাদছে । রুটির প্যাকেট খোলায় সে এতটাই ব্যস্ত !
তোমার এসবের অভ্যাস করে লাভ কি ? এখন থেকে আমার জন্য ভাববে না , নিজে খেয়ে নিবে ।
আর তুমি ?
আমারটা আমি বুঝে নিব ।
আমাকে তাহলে বিয়ে করলা কেন ? নিজে নিজেই তো চলতে পার !
নিসার কথায় রাফিন অবাক হয় । নিসা আবার রাফিনের প্রেমে পড়ে ! নিসা রাফিনের চোখ মুছে দেয় ।
আমার পুঁচকে স্বামী কিভাবে কাদে ! গাল ভিজিয়ে কি করেছে ! এত বোকা কেন তুমি ?
জানি না । তুমি এত মিষ্টি করে কিভাবে বল এসব ?
জানি না !
আচ্ছা হইসে , এখন খাও ! সারাদিন না খেয়ে ছিল নিশ্চিত !
নিসা মুগ্ধ হয় রাফিনের কথায় । কি সহযেই বুঝে গেল , আমি আয সারাদিন না খেয়ে আছি !
নিসা রাফিনের বুকে মাথা দিয়ে , চুপ করে থাকে । রাফিন নিসাকে খাইয়ে দেয় । বাম হাত দিয়ে নিসার চুলে আঙুল চালাতে থাকে রাফিন ।
নাহ , এই রাতে , ভালোবাসার অনুভুতির কাছে , ক্ষিদের অনুভুতিটা বোধ হয় হেরেই যায় !!!
EmoticonEmoticon