এক সময় আকা বাকা পথে হারিয়ে গেল হিয়া মানুষের মনের ব্যাপারগুলো অনেক জটিল

5:58 PM


-হিয়াঃ তারেক,তুমি বুঝতে পারছ না? আমি কি বলছি?

-তারেকঃ না।আমি বুঝতে চাই না

- তুমি না বুঝলেও আমার কিছু করার নেই। আমি সত্যি কথা বলছি। সোজা কথা বলছি।

- আমি বিশ্বাস করব না।

- তোমার অবিশ্বাসে আমার কথা বা ডিসিশন কোনটাই পাল্টাবে না।

হিয়ার মুখের
দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছে তারেক। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে কথাগুলো। কষ্ট পেতে ভাল লাগে না। তাই অবিশ্বাস করছে কথাটা।

ভালবাসার মানুষের কথা বিশ্বাস করতে হয়। তবে মাঝে মাঝে কিছু অবিশ্বাস বিশ্বাসের পাল্লা ভারী করে।

হিয়ার সাথে ৩ মাসের সম্পর্ক। খুব বেশি সময় তা না। তবুও সম্পর্কটা অনেক গভীর হয়েছে তাদের ।বিশেষ করে এই ভালবাসার সম্পর্কে বেশী ডুবে গেছে তারেক। ভেসে উঠতে পারছে না।

চোখে মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট তারেকের। হিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল...

-তারেকঃ তুমি আমার সাথে এতদিন অভিনয় করেছ?

-হিয়াঃ আমি তা বলছি না। তবে আমার নাজিমের সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পর, খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। যা পাই তাই আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। কষ্ট
ভুলে থাকার জন্য। তুমি সে সময়টাতে আমার জীবনে এসেছ।
আমার কষ্ট দুঃখগুলো ভুলিয়ে দিয়েছ। আমি ঐ সময়টাতে তোমাকে অনেক আপন করে নিয়েছিলাম। কোন সময়
যে সম্পর্কটা ভালবাসার দিকে চলে গিয়েছে টের পাইনি। ভালবেসে ফেলেছিলাম ।নাজিমকে ভুলে থাকার জন্য তোমার ভালবাসায় সায় দিয়েছিলাম।কিন্ত ু নাজিম আবার ফিরে আসবে আমি ভাবতে পারিনি। আমি মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম। নাজিম যদি কখনও
ফিরে আসে আমি ওকে পাত্তা দিব না। আমার জীবনে ঠাই দিব না।কিন্তু ও আমার কাছে এসে আবার ভালবাসার কথা বলার
পর আমার ভিতরে কি যেন
হয়ে গিয়েছিল। জানিনা কি। আমি সত্যি দোটানায় পরে গিয়েছিলাম। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি। কিন্তু নাজিম আমার প্রথম
ভালবাসা। আমি ওকে ভুলতে পারছি না। আমি তোমার ভিতর সবসময় নাজিমকে খুঁজেছি। নাজিমের মত করে চেয়েছি। তুমি নাজিমের থেকে অনেক ভাল ছেলে। তবুও আমি পারছি না তারেক।

- তুমি নাজিমকেও ভালবাস, আমাকেও বাসো। আমার সমস্যা নেই।

- এটা সম্ভব না। একটু বাস্তব
হিসেবে দেখ। তুমি যা বলছ তা অসম্ভব। আমার তোমাকে অথবা নাজিমকে যে কোন একজনকেই ভালবাসতে হবে। আর আমার
জানিনা কেন নাজিমের প্রতি ভালবাসাটা বেশি। আমার হুট
করে কাজটা করা উচিৎ হয় নি। প্লিজ তারেক আমাকে মাফ করে দাও। আমি সত্যি চাইনি তোমাকে কষ্ট দিতে। আমরা ভাল বন্ধু হয়ে থাকতে পারি।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তারেক। কিছুই বলার নেই। আটকে রাখার পথ নেই। বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে খুব। মানুষ তার প্রথম মন থেকে বাসা ভালবাসা ভুলতে পারে না।
হারাতে চায় না। হিয়াও চাচ্ছে না। তারেকও পারছে না। ছেড়ে দিতে। প্রথম ভালবাসা হারাতে। তবুও তারেকআস্তে করে বলল।..

"আমার একটা ইচ্ছা ছিল রাখবে?"
- বল।
- শেষ বার তোমার হাতটা একবার ধরতে দিবে? অল্পও সময়ের জন্য।

হিয়া হাতটা বাড়িয়ে দিল। তারেক ২ হাত দিয়ে হিয়ার ডান হাতটা ধরল। আলতো করে। ধরে রাখার জন্য না। একটু সময় ছুঁয়ে দেখার জন্য। সব ভালবাসা সবাই ধরে রাখতে পারে না। তারেক ভালবাসতে পারে। ধরে রাখতে পারে না।

তারেক একটু হাসি দিয়ে বলল...
- আচ্ছা, ভাল থেক।
আমি যাকে ভালবাসি তাকে পেলে
ভালবাসার মানুষ হিসেবেই পাব। শুধু বন্ধু হিসেবে না। দোয়া করি সুখে থাক।
- আমাকে মাফ করে দিও তারেক।
তুমি ভাল ছেলে। অনেক ভাল।আমি কত খারাপ । তোমাকে কষ্ট দিলাম।আমার পর
যে তোমার জীবনে আসবে সে তোমাকে কখনও কষ্ট
দিবে না দেখো!!! আচ্ছা আমি আসি।

ধীর পায়ে হেটে যাচ্ছে হিয়া যেন
বুকের পাজর ছিরে। আর তার
বোবা অনুভুতি নিয়ে তাকিয়ে আছে তারক।

এক সময় আকা বাকা পথে হারিয়ে গেল হিয়া মানুষের মনের ব্যাপারগুলো অনেক জটিল।
একেক জনের মনের একেক জটিলতা। একেক জনের
একেক রকম, আবেগের পাল্টাপাল্টি। নিজের মনের ব্যাপারগুলো নিজেই হয়ত বুঝে না কেউ।

তারেক আকাশের দিকে তাকাল। আজ মেঘেদের কোন তাড়া নেই। কালো মেঘ, সাদা মেঘ, ধূসর মেঘ। কেউ ঝিম মেরে বসে আছে। কেউ ভেসে যাচ্ছে। একটু
পর বৃষ্টি হবে। মেঘ অদৃশ্য হবে। মেঘের উপর মেঘ থেকে হবে পানির উপর পানি। বৃষ্টির
উপর বৃষ্টি। সব মেঘ ঠিকই বৃষ্টি হয়ে যাবে। কালো মেঘ, সাদা মেঘ, ধূসর মেঘ। কেউ ঝিম মেরে বসে আছে। কেউভেসে যাচ্ছে।
কিন্তু এর সাথে তারেকের
মিলালে চলে না।

তারেক ঝিম মেরে বসে আছে। আর হিয়া চলে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে। তারেকের বৃষ্টি ঝরছে। চোখ থেকে। হিয়া বৃষ্টি ঝরাচ্ছে না। ভেসে যাচ্ছে। ও অন্য কোথাও ঝরাবে।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »

Popular Posts